বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ফলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক এবং বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. তাবিউর রহমান প্রধানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব এখন শিক্ষকদের গণ্ডি পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল শিক্ষক মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়ে অভিযোগ করেন, তাবিউর রহমান প্রধান তাঁর বিরুদ্ধে ঘনিষ্ঠ পাঁচ জন শিক্ষার্থী রাহাতুল জান্নাত, ফাহমিদা ইয়াসমিন, কুমার বিশ্বজিৎ, অনামিকা আক্তার খুশি ও রুমানুল ইসলামকে ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে হয়রানি করে আসছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাবিউর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন এবং একাডেমিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন।
অন্যদিকে, একদিন আগেই ২২ এপ্রিল, বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এমএসএস প্রোগ্রামের চারজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, অনিয়ম ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, মাহমুদুল হক পাঠ্যসূচি না মেনে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন, রাত ১০টার পর অনলাইন ক্লাস নিয়ে ব্যক্তিগত সময় ব্যাহত করেন এবং শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অসংবেদনশীল আচরণ করেন।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষকের সঙ্গে মতভিন্নতা পোষণ করলেই ‘আইনের আওতায় আনার’ হুমকি দেওয়া হয় এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, পূর্ববর্তী সেমিস্টারগুলোর ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় একাডেমিক ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
এই পাল্টা অভিযোগের জবাবে মাহমুদুল হক বলেন, “এগুলো পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। যে শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন, তিনিই হাইকোর্টে নিয়োগ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত। যেসব কোর্স নিয়ে অভিযোগ, সেগুলো দুই বছর আগের এবং নম্বর দুজন পরীক্ষক দেখেন, তাই এককভাবে নম্বর কম দেওয়ার সুযোগ নেই।”
অন্যদিকে, মাহমুদুল হকের অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে তাঁর নিয়োগের পর থেকেই তাবিউর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছেন। এমনকি বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়োগে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. তাবিউর রহমান বলেন, কোন শিক্ষার্থীকে আমি প্ররোচনা দিইনি। তারা ছোট না যে তাদের প্ররোচনা দিয়ে কিছু করানো যাবে। বরং ওই ব্যাচের সকল শিক্ষার্থী শিক্ষক মাহামুদুল হকের বিরুদ্ধে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় প্রধান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। বিভাগ থেকে ওই শিক্ষককে বিষয়টি সমাধান করার তাগিদ দেয়া হলেও তিনি তা করেন নি। পরে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে উপাচার্য বরাবর তাদের অভিযোগ জমা দিয়েছে, এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। মাহামুদুল হকের করা অভিযোগের প্রতিটা বিষয় মিথ্যা এবং মনগড়া। তার কাছে এটা নতুন কিছু না, মিডিয়া ট্রায়াল করার জন্য সব সময় মিথ্যা কথা বলে থাকেন। তিনি সবাইকে কথায় কথায় আইন আদালতের ভয় দেখান, এবার শিক্ষার্থীরাও তার রোষানল থেকে রেহাই পেল না। তিনি যে সেমিস্টারের রেজাল্ট শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করার বিষয়ে আমার বিপক্ষে অভিযোগ করেছেন, সেই পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তো পরের কথা আমি সদস্য্যও ছিলাম না।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের “আমরা দুই পক্ষ থেকেই লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি অভিযোগ সেল গঠন করেছি। এই অভিযোগ সেল দ্রুততম সময়ে তদন্ত করে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”