ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে স্থানীয় ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের চাঁদাদাবী, অত্যাচার, নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে রক্ষার দাবীতে মানববন্ধন করেছে ভূক্তভোগি ২০ পরিবারের অর্ধশতাধিক লোক। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার অরূয়াইল ইউনিয়নের ধামাউড়া চকবাজার এলাকায় এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে মাইকিং করে তাদেরকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছ!
নির্যাতন আর জোর পূর্বক টিপসহি বা স্বাক্ষর আদায়ের হুমকি দেয়ায় গত দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন রহমত আলীর স্ত্রী হাজেরা খাতুন। মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী (৭৮), মোর্শেদ মিয়া (৭০), হিরা মিয়া (৬৫), হারূন মিয়া (৬০), সাবেক ইউপি সদস্য মো. হাবিব উল্লাহ, মহিলা ইউপি সদস্য মোছা. মালেকা বেগম, জাহেদ মিয়া ও পুতুল বেগমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ধামাউড়া গ্রামের ভূমিহীন হতদরিদ্র রহমত আলী ১৩ বছর আগে (২৯.০৯.২০১৩ খ্রি.) ধামাউড়া মৌজায় মোট ৩৮ শতাংশ সরকারী জমি ইজারা নেন। ৮ বছর আগে রহমত আলী মারা যান। ওই জমি দখলে নিয়ে রহমত আলীর বিধবা স্ত্রী হাজেরা খাতুনের ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস করছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
বিএনপি নেতা সোহেল ভূঁইয়া, মানিক মিয়া, সামছু মেম্বার ও মোখলেছ মিয়ার নেতৃত্বে গ্রামে গড়ে উঠা একটি চক্রের লোলুপ দৃষ্টি পরে হাজেরা বেগমের জায়গার উপর। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে জায়গা জমি দখল করাই এদের পেশা। তারা কৌশলে মসজিদের নাম ব্যবহার করে জোর পূর্বক জায়গাটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। জায়গায় নির্মিত হাজেরার ঘরটি ভেঙ্গে ফেলে দেয়। একসময় হাজেরার উপর চালায় অত্যাচার ও নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার। ষ্ট্যাম্পে হাজেরা টিপসহি বা স্বাক্ষর নিতে নানা হুমকি ধমকি দিতে থাকে। গত ২ মাস ধরে এলাকা ছাড়া হাজেরা খাতুন। সত্য কথা বলায় হাজেরার গোত্রের লোকজনকে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। মাইকিং করে তাদেরকে রাস্তাঘাটে হাঁটে বাজারে অপমান অপদস্থ ও মারধর করা হচ্ছে।
পথিমধ্যে মহিলাদেরও হেস্তনেস্ত করা হচ্ছে। ভয়ে প্রায় ২০ পরিবারের লোক গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি। এদের বিরূদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। আমরা সকলেই কমবেশী তাদের অত্যাচারের শিকার। তাই মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা তাদের হাত থেকে বাঁচতে চাই। হাজেরা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি দুই মাস ধইরা এলাকা ছাইড়া অন্য জায়গায় আছি। টিপসহি না দিলে আমারে মাইরা ফালাইব। সরকার জায়গা দিছে আমার স্বামীরে আর আমারে। এই জায়গা অহন হেরারে দিয়া দিতে অইব।
তবে সোহেল ভূঁইয়াসহ অনেকেই সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এই জমির একটি অংশ ৪০ বছর ধরে গ্রামের মসজিদের দখলে ছিল। কয়েক মাস আগে জানতে পারি এটি রহমত আলীর পরিবার ইজারা নিয়েছেন। মানুষ একটি অংশ মসজিদের জন্য পেতে চাই। এই পক্ষে আমিও আছি। দখলের কোন বিষয় নেই। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুর রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মানববন্ধনের ঘটনা জেনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেকের সাথে কথা বলেছি। হাজেরা বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি অনেকেই জানেন না। হাজেরাকে আমি ফোন করেছি। তিনি আসেননি। জোর করে মসজিদের জায়গা নেয়ার কোন বিধান বা সুযোগ নেই।
আমি উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলেছি। প্রসঙ্গত: গতকাল দুপুরে চকবাজারে মানববন্ধন চলাকালে মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছিল, “সম্মানিত গ্রামবাসী ওসি সাহেব অল্পসময়ের মধ্যে মসজিদের জায়গার বিষয়ে কথা বলতে আসছেন। আপনারা সকলে দ্রত প্যান্ডেলে চলে আসুন।” ওসি বলেছেন এমন ঘোষণা দেয়া ঠিক না।